সময় এখন ডেস্ক:
কুষ্ঠরোগীদের জন্য ও’ষুধ তৈরি এবং তা বিনা পয়সায় সরবরাহ করতে দেশের ও’ষুধ কোম্পানির মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, কুষ্ঠরোগীদের কাউকে চাকরিচ্যু’ত করা যাবে না। রোগ দেখা দিলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। কুষ্ঠরোগের সিম্পটম সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি এবং তা প্রচার করার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
বুধবার হোটেল সোনারগাঁওয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কুষ্ঠরোগ মুক্ত করার বিষয়ে আয়োজিত জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কুষ্ঠরোগ হওয়ার আগে কী কী সিম্পটম দেখা দেয়, সেগুলো যদি সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচার করা যায় এবং রোগ শুরুর প্রাথমিক পর্যায়ে যদি চিকিৎসা দেয়া যায়, তাহলে তারা ভালো হয়ে উঠবেন এবং সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবেন। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা তৈরির জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা আমাদের সমাজেরই একজন। কুষ্ঠরোগীদের দূরে ঠেলে দেবেন না। তাদের সহানুভূতির সঙ্গে দেখা এবং এমনভাবে চিকিৎসা করতে হবে যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা সরকারে আসার পরে এই কুষ্ঠরোগ নিয়ে আমরা কাজ শুরু করি এবং তার সুফল আমরা পেয়েছি ৯৮ সালের মধ্যে। ১০০০ জনের মধ্যে মাত্র ১ জন কুষ্ঠরোগীতে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলাম। আমাদের এমডিজি ২০০০ সালে অর্জন করার কথা ছিল, সেটা কিন্তু আমরা ৯৮ সালে অর্জন করে ফেলেছিলাম। আমরা সার্ভে করে দেখেছি, এ রোগটা কিন্তু সব এলাকায় সমান নয়। কিছু কিছু এলাকায় বেশি দেখা যায়। যেমন- উত্তরবঙ্গ ও পার্বত্য চট্টগ্রামে।
কুষ্ঠরোগীদের থাকা-খাওয়া, ও’ষুধপত্র সব কিছুর ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু সরকার নয়, সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে ২০৩০ সাল লাগবে না তার আগেই আমরা বাংলাদেশকে কুষ্ঠরোগ মুক্ত করতে সক্ষম হব। এটা আমার বিশ্বাস।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে পোলিও এবং হাম এক সময় বিরাট একটা সমস্যা ছিল। সেগুলো কিন্তু আমরা আস্তে আস্তে দূর করেছি। বাংলাদেশ পারবে না- এটা ঠিক না। আমি মনে করি আমরাও পারব।
বাংলাদেশের ও’ষুধ শিল্পের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো যে ও’ষুধ তৈরি করে তা অত্যন্ত মানসম্পন্ন এবং এগুলো বিদেশে রপ্তানি করা হয়। বিদেশেও বাংলাদেশের ও’ষুধের সুনাম আছে। তারা যদি কুষ্ঠরোগের জন্য ও’ষুধ তৈরি করেন এবং বিনা পয়সায় বিতরণ করেন, তাহলে তারা একটি ভালো সেবা পাবে।
আমি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর মালিকদের সঙ্গে বসে এ বিষয়ে আলোচনা করব। এ বিষয়ে বিভিন্ন সংস্থা যেমন বেসরকারি সংস্থা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে এর ফলে মানুষ লাভবান হচ্ছে।
তিনি বলেন, কারও কুষ্ঠরোগ দেখা গেলে তাকে চাকরিচ্যু’ত করতে হবে, চাকরি থেকে বের করে দিতে হবে, সমাজচ্যু’ত করতে হবে, এই মানসিকতা বদলাতে হবে। এটা সম্পূর্ণভাবে পরি-হার করতে হবে। কারও যদি কুষ্ঠরোগ দেখা যায় তাকে চাকরিচ্যু’ত করা যাবে না। তাকে সমাজচ্যু’ত করা যাবে না। তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
যে অফিসে চাকরি করবে তাদেরই একটা দায়িত্ব থাকবে তারা যেন সঠিকভাবে তার চিকিৎসা করে। তিনি যেন সুষ্ঠু চিকিৎসা পায় এবং এর ফলে যেন প’ঙ্গুত্ববরণ না করে তার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কোম্পানির। সে অনুরোধটাও আমি সবাইকে করে যাচ্ছি।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিম, নিপপন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাসাকাওয়া।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে কুষ্ঠরোগের ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
104