বিশেষ প্রতিবেদন:
বহুল বিত’র্কিত নাগরিকত্ব বিল পাশ হয়েছে ভারতে। এই নাগরিকত্ব বিলে সবচেয়ে ক্ষ’তিগ্রস্থ দেশ হিসেবে ভাবা হচ্ছে বাংলাদেশকে। এর ফলে ভারত থেকে মুসলমানদের একটি বড় অংশকে পুশ ইন করা হতে পারে বলে ডিপ্লোম্যাট মহলের ধারণা।
ভারতে এ নিয়ে তীব্র বিত’র্ক তৈরী হয়েছে। বাংলাদেশ এমনিতেই ১২ লাখ রোহিঙ্গার চাপে জর্জ’রিত। এরপর ভারত যদি বাংলাদেশে পুশ ইন শুরু করে তাহলে বাংলাদেশ- ভারত সম্পর্ক গত ১০ বছরে যে পর্যায়ে উঠেছিল সেখান থেকে নামতে সময় লাগবে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ টানা ১১ বছর শাসনামলে প্রথম ভারত নিয়ে একটা অ’স্বস্তি এবং দোটানায় পড়েছে।
দোটানা এ কারণে, যদি বাংলাদেশ ভারতের এই নাগরিকত্ব বিলের প্র’তিবাদ করে তাহলে সেটা হবে গত ১০ বছরে বাংলাদেশ- ভারতের বৈদেশিক নীতির পরি’পন্থি। এই ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার কারো অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে অটুট রয়েছে। নাগরিকত্ব বিল পাশের তৎপরতা যখনই শুরু হয়েছে তখন থেকেই বাংলাদেশ সরকারের অবস্থা ছিল এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এমনকি আসামে যখন নাগরিকপঞ্জী ঘোষণা করা হয় তখনও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার বলেছিল এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এর ফলে বাংলাদেশ ক্ষ’তিগ্রস্থ হবে না- আশ্বস্ত করেছিলেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু যতই সময় গড়াচ্ছে ততই নাগরিকত্ব বিলের নে’তিবাচক দিক বাংলাদেশের দিকে চলে আসছে।
কাজেই এর ফলে বাংলাদেশ নাগরিকত্ব বিল নিয়ে বা আসামের নাগরিকপঞ্জি নিয়ে কোনো বক্তব্য না দিয়ে বরং ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে এড়িয়ে গিয়ে সং’কট থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। কারণ এই নাগরিকত্ব বিল এবং আসামের নাগরিকপঞ্জি বাংলাদেশে একটি ভারতবিরো’ধী ভাবনা নাগরিকদের মধ্যে তৈরি করেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে যে ভারতবিরো’ধী রাজনৈতিক শক্তি আছে তারা এটিকে কাজে লাগাতে চাচ্ছে। আর বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার এর প্র’তিবাদ না করার ফলে সেই পুরনো খেলা শুরু হয়েছে। অতীতেও আওয়ামী লীগকে ভারতীয় অনুগ্রহপুষ্ট দল বলা হত এবং ভারতের আ’জ্ঞাবহ দল বলে দাবি করতো একটি পক্ষ।
গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে যেভাবে সমুদ্রসীমা, ছিটমহলসহ বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় ইস্যু নি’ষ্পত্তি করেছে, তাতে পারস্পরিক সম্মান ও মর্যাদা বাংলাদেশকে দিয়েছে। কিন্তু এখন নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়ে নীরব থাকায় আওয়ামী লীগ সরকারকে ভারতের ব্রাকেট-ব’ন্দী করার রাজনৈতিক অপ-কৌশলটি আবার চা’ঙ্গা হয়েছে।
এর ফলে আওয়ামী লীগের প্র’তিপক্ষরা বিশেষ করে ভারতবিরো’ধী অপ-শক্তিরা এটা প্রচার করছে, বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণে আওয়ামী লীগ উপযুক্ত না। ফলে দেশের মধ্যে আওয়ামী লীগের বাইরে যে আওয়ামী লীগের জন সমর্থন বা লোকজন আছে তারা বিভ্রা’ন্ত হচ্ছেন।
কূটনৈতিক মহল মনে করছে, নাগরিকত্ব বিল পাশ হবার ফলে ভারতের একটা বড় সংখ্যার মুসলমানরা ভারতের নাগরিকত্ব হারাবে এবং এই নাগরিকদেরকে বাংলাদেশে পুশ ইন করা হবে এমন ইঙ্গিত বিজিপির প্রভাবশালী নেতারা দিচ্ছে। এমনকি কোথাও কোথাও টুকটাক যে পুশ ইন করা হচ্ছে না এমন না।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আওয়ামী লীগ কী করবে? গত ১১ বছরে ভারতের সাথে যে সম্পর্ক সেই সম্পর্ক অটুট রাখার স্বার্থে মুখ বুঁজে মেনে নেবে? নাকি দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করে ভারতের এই পুশ ইন এর ব্যাপারে প্র’তিবাদ করবে?
অবশ্য আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন যে, বাংলাদেশের কোন নাগরিক ভারতে অ’বৈধভাবে অনু-প্রবেশ করেনি এবং বাংলাদেশে পুশ ইন করা হয় তাহলে বাংলাদেশ আলাপ-আলোচনা এবং কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে তা সমাধানের উদ্যোগ নেবে।
কিন্তু বিজিপি এই নাগরিকত্ব বিল নিয়ে যেমন যু’দ্ধংদেহী মনোভাব তৈরি করেছে তাতে একদিকে যেমন বাংলাদেশের সাম্প্র’দায়িক শক্তি নতুন করে দানা বাধার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে এবং বাংলাদেশের যে সাম্প্র’দায়িক সম্প্রীতি তা বিনষ্টে’র একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
আবার অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য কতটা সক্ষম- সেই চ্যালেঞ্জও তৈরি হয়েছে। এখন দেখার বিষয় যে এই পরিস্থিতি আওয়ামী লীগ কীভাবে সামলায়।
145