চট্টগ্রাম ব্যুরো:
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃ’ত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃ’ত্যু হয়।
এ উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে নগর আওয়ামী লীগ ও তার পরিবার। কর্মসূচির শুরুতে আজ রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় নগরের চশমাহিল কবরস্থানে মরহুমের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও জিয়ারত করা হয়।
বেলা ১১টায় কাজীর দেউড়ির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশনাল সেন্টারে শুরু হয়েছে আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে আছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু। সভাপতিত্ব করছেন মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। বিকেল ৪টায় মুক্তিযুদ্ধে’র বিজয়মেলা পরিষদের আয়োজনে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে গতকাল শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) নগরের নন্দনকানন বৌদ্ধ মন্দিরে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃ’ত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক সমবেত প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।
১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বর রাউজানের গহিরা গ্রামের বক্স আলী চৌধুরী বাড়িতে জন্ম মহিউদ্দিন চৌধুরীর। বাবা হোসেন আহমদ চৌধুরী ছিলেন রেলওয়ে কর্মকর্তা। মা বেদুরা বেগম।
১৯৬২ সালে এসএসসি, ১৯৬৫ সালে এইচএসসি এবং পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে অনার্স ডিগ্রি লাভ করেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। ১৯৬৮ ও ১৯৬৯ সালে তিনি নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
এরপর শ্রমিক রাজনীতিতে যুক্ত হন মহিউদ্দিন চৌধুরী। যুবলীগের নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
পঁচাত্তরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহ’ত হলে প্রতিশো’ধ নিতে মৌলভী সৈয়দের নেতৃত্বে ‘মুজিব বাহিনী’ গঠন করেন। ওই সময় ‘চট্টগ্রাম ষড়’যন্ত্র মামলা’র আসামি করা হলে তিনি কলকাতায় চলে যান। সেখানে থেকেও তৎকালীন অ’বৈধ সরকারকে উ’ৎখাতের পরিকল্পনা করেন, অত’র্কিতে এসে হাম’লা চালাতেন। এরপর ১৯৭৮ সালে দেশে ফেরেন।
১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর বেওয়ারিশ ম’রদেহ নিজ কাঁধে বহন করে দাফন ও সৎকারের ব্যবস্থা করার সেই স্মৃতিচারণ করেন এখনো অনেক মানুষ। চট্টগ্রামের গণমানুষের নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী এভাবেই এগিয়ে এসেছেন সকল দুর্যোগ ও অন্যান্য সমস্যায়।
১৯৯৪ সালে তিনি প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। পরে আরও ২ বার তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামের সফলতম মেয়র হিসেবে তার উদাহরণ দেন চট্টগ্রামের মানুষ।
ওয়ান ইলেভেনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে আটক করে রাখে। সেই সময় তার কন্যা টুম্পা ক্যান্সারে আক্রা’ন্ত অবস্থায় সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাকে শর্ত দেয়া হয়েছিল মৃ’ত্যুশয্যায় কন্যাকে দেখতে যাওয়ার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেয়া হবে যদি আবেদন করেন। তবে আর দেশে ফিরতে পারবেন না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সেই শর্ত প্র’ত্যাখ্যান করে চট্টলবীর মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেছিলেন, আমার নেত্রী (শেখ হাসিনা) কারাব’ন্দি, তাকে এভবে রেখে বেইমানের মত দেশ’ত্যাগ করবো না। টুম্পাকে শেষ দেখা হয়নি আর।
২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর হৃদযন্ত্র ও কিডনির জটিলতায় নগরের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মহিউদ্দিন চৌধুরী।
প্রয়াত এই নেতার স্মরণে আয়োজিত কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন অনুরোধ জানিয়েছেন।