সময় এখন ডেস্ক:
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করা ‘মেধাবী’ তরুণরা বেসরকারি খাতে নিয়োগ পরীক্ষা দিলেও চাকরি পাচ্ছেন না। একজন চাকরির প্রস্তুতি শিকেয় তুলে মন দিয়েছেন টিউশনিতে। আবার অপর একজন টিউশনিও হারিয়েছেন। কোটা আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক তারেক রহমান, মোল্লা বিন আমিন ও জসিম উদ্দিন আকাশ- ৩ জন মিলে নেমেছিলেন দই ব্যবসায়। তবে আশানুরূপ ক্রেতার সাড়া না পেয়ে বন্ধের উপক্রম!
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযো’দ্ধা কোটা বাতিলের দাবিতে ৯০ দশকে আন্দোলনে নেমেছিল ইসলামী ছাত্র শিবির। নানা সময় একই দাবিতে ছাত্ররা আন্দোলন করলেও তা আমলে নেয়নি সরকার। পরে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে সেই শিবিরের বর্তমান প্রজন্মের নেতারা মিলে সাধারণ ছাত্রদের উ’স্কানি দিয়ে শুরু করে নতুন করে আবার আন্দোলন।
তাদের আন্দোলন আর সহিং’সতায় শিক্ষাঙ্গনে পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। ঢাবির উপাচার্যের বাসভনে অগ্নি’সংযোগ, ভা’ঙচুর ও লু’টপাট হয়। আন্দোলনকারীদের কেউ কোটা বাতিল, কেউ সংস্কারসহ বিভিন্ন দাবিতে বি’ভক্ত হয়ে গেলে শেষ পর্যন্ত সরকার ১ম ও ২য় শ্রেণিতে সব ধরনের কোটাই তুলে দিয়েছে।
তবে কোটা আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ছাত্ররা বি’পাকে পড়েছে মূলত মামলার কারণে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাড়িতে হাম’লার মামলায় নাম থাকায় সরকারি চাকরি পাওয়া নিয়ে সংশয়ে তারা।
মানবাধিকার কমিশনের কাজী রিয়াজুল হক বলেন, তাদের বিরু’দ্ধে দোষ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত তারা অপরাধী না। আইনগতভাবে তারা যেকোনো জায়গায় চাকরি করতে পারে। যাদের মেধা কম, তারা হয়তো এসব কথা বলে বেড়াচ্ছে। যেসব প্রতিষ্ঠান তাদের চাকরি দিচ্ছে না তারা আইন সম্পর্কে অ’জ্ঞতার কারণেই হয়তো দিচ্ছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান ধরেই নিয়েছেন তিনি সরকারি চাকরি পাবেন না। তাই নিয়োগ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছেন না। মনোযোগ দিয়েছেন টিউশনিতে। ছাত্র পড়িয়েই সংসারের খরচ তুলছেন।
রাশেদ বলেন, মামলা থাকায় আমার সরকারি চাকরি হবে না শুনেছি। প্রাইভেট সেক্টরে যে ঢুকব, বেশ কয়েকজন বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা চাকরি পাচ্ছে না। তাদের বলা হয়েছে, মামলা থাকায় চাকরি দিলে বিপদে পড়তে হবে। এমবিএর পড়াশোনাতেও ব্যাঘা’ত ঘটছে। এমবিএ বিভিন্ন কারণে শেষ করা হয়নি। মাঝে জেলে ছিলাম। পরে আবার ভর্তি হলেও ক্যাম্পাসে ঢুকতে ভয় লাগে।
কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হাম’লার ঘটনায় শাহবাগ থানায় করা মামলায় হুকুমের আসামি রাশেদ। এ ছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে আলাদা মামলা করা হয়েছে।
একজন হারিয়েছে টিউশনি
কোটা সংস্কার আন্দোলনের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর টিউশনি হারিয়েছেন গণমাধ্যমে তার নাম আসার পর। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, নাম পরিচয় জেনে অনেকে টিউশনিতেও নিতে চায় না। এখন বাবার হোটেলে খাচ্ছি। চেষ্টা করেছিলেন চাকরির, কিন্তু হয়নি।
নূর বলেন, সরকারি বিভিন্ন পোস্টে চাকরির আবেদন করে রেখেছি। তবে সেটা পাব কিনা সেটা নিয়ে হতা’শায় রয়েছি। নাম পরিচয় শুনে যেখানে টিউশনি থেকে বের করে দিল, সেখানে কীভাবে সরকারি চাকরি পাব? আমরা বেসরকারি চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে গেলেও তো না করে দেওয়া হয়।
দইয়ের ব্যবসা ক্রেতার অভাবে ম’ন্দা
কোটা আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা তারেক কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করে ঢাকায় বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে এসে জড়িয়ে পড়েন কোটা আন্দোলনে। তিনিও বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের একজন যুগ্ম আহ্বায়ক। টিউশনি পাচ্ছেন না তিনিও। শুরু করেন দইয়ের ব্যবসা। বুয়েটের পাশে পলাশী মার্কেটে দিয়েছিলেন দইয়ের আউটলেট। বগুড়া থেকে দই এনে বিক্রি করতেন। কিন্তু ক্রেতার অভাবে সেটাও এখন বন্ধের উপক্রম। এখন অনলাইনে শুরু করেছেন ব্যবসা। অর্ডার পেলে সরবরাহ করেন বাড়ি বা অনুষ্ঠানস্থলে।
তারেক বলেন, চাকরিতে ৫ বার লিখিত পরীক্ষায় টেকার পরও প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরি হয়নি। একটি ব্যাংকে গিয়েছিলাম পরীক্ষা-ভাইবা দিলাম, কিন্তু চাকরিটা হলো না। ভূঁইয়া একাডেমিতে ডাকল, সেখানেও হয়নি। একই অবস্থা হয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে। লিখিত পরীক্ষায় পাস করি কিন্তু চাকরি হয় না।
তাই কোটা আন্দোলনের নেতা মোল্লা বিন আমিন, জসিম উদ্দিন আকাশসহ কয়েকজন মিলে দইয়ের আউলেট খুলেছি। কিন্তু পরিচয় জানলে কাস্টমার আসে না। পত্রপত্রিকায় আমাদের নিয়ে লেখালেখি হওয়ায় বিপদে আরও বেড়েছে।