শহীদ আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত স্কুল রক্ষার দাবীতে চট্টগ্রামে মানব-বন্ধন

0

চট্টগ্রাম ব্যুরো:

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’- কালজয়ী এই গানের সুরকার বীর মুক্তিযো’দ্ধা শহীদ আলতাফ মাহমুদের স্মৃতিবিজড়িত বরিশালের বাড়ি ও সঙ্গীত বিদ্যালয়টি ভূমিদ’স্যুদের হাত থেকে রক্ষা ও সংরক্ষণের দাবীতে চট্টলাবাসীর উদ্যোগে এক মানব-বন্ধনের আয়োজন করা হয়।

আজ ২০ ডিসেম্বর, শুক্রবার বিকেল ৩টায় চট্টগ্রামের জামালখানে অবস্থিত প্রেসক্লাবের সামনে এই মানব-বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় চট্টলাবাসী অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন মুক্তিযু’দ্ধ মঞ্চ, মহানগর শাখা, চট্টগ্রাম, বোধন আবৃত্তি পরিষদ, স্বপ্নবাগিচাসহ কয়েকটি সংগঠনের সদস্যবৃন্দ।

মানব-বন্ধনের আয়োজনের পুরোধা চট্টগ্রামের বিশিষ্টজন এবং বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত দেওয়ান মাবুদ আহমেদ জানান, অনলাইন অ্যাক্টিভিজমের সাথে জড়িত চট্টগ্রামের কিছু উদ্যমী তরুণকে নিয়ে এই সমাবেশের আয়োজন। বীর মুক্তিযো’দ্ধা শহীদ আলতাফ মাহমুদের বাড়ি ও সঙ্গীত বিদ্যালয়টিকে দখ’লদারদের হাত থেকে রক্ষায় প্রশাসনের কাছে দাবি জানাতেই আমরা এখানে সমবেত হয়েছি।

যথাযথ মর্যাদার সাথে একাত্তরের শহীদদের স্মৃতি ও দেশের আনাচে কানাচে অ’যত্ন অব’হেলায় পড়ে থাকা প্রতিটি ব’ধ্যভূমি যেন সংরক্ষণ করা হয়, সেই দাবি জানান এই মানব-বন্ধনে উপস্থিত সবাই।

এই মানব-বন্ধন আয়োজন এবং সফল করায় উপস্থিত সকলের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বীর মুক্তিযো’দ্ধা শহীদ আলতাফ মাহমুদ এর কন্যা শাওন মাহমুদ।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৫ সাল থেকে শহীদ আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যালয়ের ওই জমি নিয়ে টানাটানির শুরু। তাতে তৎকালীন প্রশাসনও সহযোগী ছিল। শহীদ আলতাফ মাহমুদের নামে থাকা সম্পত্তি রক্ষায় সে সময় প্র’তিবাদ করেন গুটি কয়েক মানুষ।

মূলতঃ স্বাধীনতার পরই ১৯৭২ সালে শহীদ আলতাফ মাহমুদের নামে শহীদ আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৮০ সালে নগরীরর হাসপাতাল রোডে শহীদ আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যালয়ের নামে ভবনসহ জমি বরাদ্দ দেয় সরকার। এরপর থেকে ওই নামে বরাদ্দ বহাল থাকে। সরকার কখনো ওই বরাদ্দ বাতিল করেছে এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু কয়েক বছর যেতে না যেতে বিদ্যালয়ের জমির দিকে চোখ পড়ে একটি চক্রের। তারা জাল-জা’লিয়াতির মাধ্যমে সরকারি সম্পত্তি নিজেদের নামে করা এবং আম-মোক্তারনামার মাধ্যমে বিক্রির উদ্যোগ নেয়। যাতে সরকারি আইনজীবীসহ প্রশাসন ও কিছু দালাল যুক্ত ছিল। তাদের কাছ থেকে এক পর্যায়ে ওই সম্পত্তি কিনেছেন বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ী বিজয় কৃষ্ণ দে ও তার স্ত্রী।

জানা যায়, শহীদ আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যালয়ের নামে বরাদ্দ দেওয়া ওই জমি কিনতে বিজয় কৃষ্ণ দে’কে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। তিনি প্রথম দিকে জমি কিনতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু ওই চক্রটি বিভিন্নভাবে প্র’রোচিত করে তাদেরকে এই জমি কিনতে।

কিছুদিন পূর্বে বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিজয় কৃষ্ণ দে বলেছেন, শহীদ আলতাফ মাহমুদের স্মৃতি বিজড়িত শহীদ আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব বিন’ষ্ট হতে দেবেন না।

১৯৫২ সালের ভাষার জন্য সংগ্রামের ইতিহাসের অনন্য দিকপাল শহীদ আলতাফ মাহমুদ। আর্ন্তাজিতক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে পৃথিবীর ১৮৮টি দেশে একযোগে সবার কণ্ঠে যে গান ধ্বণিত হচ্ছে, সেই গানের সুরকার গেরিলা যো’দ্ধা শহীদ আলতাফ মাহমুদকে ১৯৭১ সালের ৩০ ঢাকার আগস্ট বাসা থেকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায় পাকি বাহিনী। ধারণা করা হয় ১৪ ডিসেম্বর অন্যান্য বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে তাঁকেও রায়ের বাজার ব’ধ্যভূমিতে নিয়ে হ’ত্যা করা হয়। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযু’দ্ধে শহীদ আলতাফ মাহমুদ অনন্য অবদান রেখেছেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযু’দ্ধের সময় শহীদ আলতাফ মাহমুদ অসংখ্য দেশাত্মবোধক গান রচনা ও পরিবেশনার মাধ্যমে মুক্তিযো’দ্ধা ও স্বাধীনতাকামী জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাঁর সেসব গান তখন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হতো। এ ছাড়া মহান মুক্তিযু’দ্ধের সময় মুক্তিযো’দ্ধাদের অর্থ ও খাদ্য দিয়েও প্রত্যক্ষ্যভাবে সহযোগিতা করেছেন এই গেরিলা যো’দ্ধার পরিবার। তাঁর স্মৃতিতে বরিশালে তেমন কোন স্থাপনা কিংবা প্রতিষ্ঠান নেই। শহীদ আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যালয় তার স্মৃতি কিছুটা হলেও রক্ষা করে চলেছে।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!