ড. জাফর ইকবাল: আমাদের স্বপ্ন বুননের বাতিঘর

0

মুক্তমঞ্চ ডেস্ক:

যুক্তরাষ্ট্রের বেল ল্যাবরেটরিতে উচ্চ বেতনে গবেষণা করার মতো লোভনীয় কাজ ছেড়ে একজন লোক দারিদ্রপীড়িত স্বদেশে ফিরে এলেন। যৎসামান্য বেতনে শিক্ষক হিসেবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিলেন। বিভিন্ন অ’ন্যায় অ’সঙ্গতি নিয়ে নিজের কলম ছোটালেন। বিনিময়ে পেলেন প্রা’ণনা’শের হুম’কি। শুধু তা-ই নয়, তাকে হ’ত্যার জন্য হাম’লাও চালানো হলো।

বলছি, জনপ্রিয় লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের কথা। দেশপ্রেম বলতে বিলু’প্তপ্রায় একটা ব্যাপার আছে। জাফর ইকবালের মতো লোকদের জন্যই সেটাকে এখনও জাদুঘরে পাঠিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সচেতন, স্বপ্নবাজ তরুণ সমাজের বাতিঘর হয়ে প্রা’ণনা’শের হুম’কি উ’পেক্ষা করেই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। সাদাসিধে, চিরতরুণ, সাহসী এই মানুষটির আজ ৬৮ তম জন্মদিন।

মুহম্মদ জাফর ইকবাল বাংলাদেশে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর অন্যতম পথিকৃৎ। ১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর তিনি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তার বড় ভাই এবং রম্য ম্যাগাজিন উন্মাদের সম্পাদক, লেখক ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব ছোট ভাই। বাবা মুক্তিযো’দ্ধা শহীদ ফয়জুর রহমান ও মা আয়েশা খাতুন।

বাবার পুলিশের চাকরির সুবাদে তার ছোটবেলা কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়। জাফর ইকবাল ১৯৬৮ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৭০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন যথাক্রমে ১৯৭৫ ও ১৯৭৬ সালে। তিনি ১৯৮২ সালে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।

১৯৯৪ সালে প্রবাস জীবনের ইতি টেনে দেশে ফিরে মুহম্মদ জাফর ইকবাল অধ্যাপক হিসেবে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে যোগ দেন। বাংলাদেশে প্রথম কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইবার অপ্টিক ইন্টারনেট ব্যাকবোন নির্মিত হয় তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। গত বছর তিনি শাবিপ্রবি থেকে অবসর নিয়েছেন।

সাহিত্যমনস্ক পরিবারের সন্তান জাফর ইকবাল খুব অল্প বয়স থেকেই লিখতে শুরু করেন। তিনি প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখেন ৭ বছর বয়সে। তার প্রথম প্রকাশিত সায়েন্স ফিকশন গল্প ‘কপোট্রনিক ভালোবাসা’। এটি সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশিত হয়। তার লেখা অনেক কিশোর উপন্যাস থেকে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ও নাটক নির্মিত হয়েছে। এ ছাড়া তিনি নিয়মিত কলাম ও বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখি করেন।

যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার সময় জাফর ইকবাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী ড. ইয়াসমিন হকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ইয়াসমিন হক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। তাদের ২ সন্তান ছেলে নাবিল ইকবাল ও মেয়ে ইয়েশিম ইকবাল।

২০০৫ সালে অনলাইন জরিপে বিশ্বের ১০ জন জীবিত শ্রেষ্ঠ বাঙালির একজন নির্বাচিত হন জাফর ইকবাল। ২০১০ সালে যুগোপযোগী জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অ’ক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তিনি। মুক্তিযু’দ্ধের চেতনার সপক্ষে ও যু’দ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সর্বদা সোচ্চার তিনি।

২০০৯ সালে ‘মুক্তিযু’দ্ধের ইতিহাস’ নামে ছোট আকারের একটি বইয়ে মুক্তিযু’দ্ধের ইতিহাস তুলে ধরেন। এই বই বিক্রি থেকে কোনো অর্থ তিনি নেননি এবং প্রকাশককেও নিতে দেননি। বরং বই বিক্রির অর্থে আবার বইটি ছাপা হয়েছে সবার হাতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। সব সরকারের অ’ন্যায়ের বিরু’দ্ধেই কলম ধরেছেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তার আর সব লেখার মতো কলামও ব্যাপক জনপ্রিয় পাঠকের কাছে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ফরম তোলা, জমা দেওয়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের চরম ভো’গান্তি দূর করতে প্রথম যে মানুষটি কাজ শুরু করেছিলেন, তিনি মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তার তরুণ সহকর্মীদের নিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো ঘরে বসে ভর্তি পরীক্ষায় আবেদন করার সহজ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন তিনি। পরে জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসিসহ সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং বিভিন্ন নিয়োগের আবেদনে পদ্ধতিটি অনুসরণ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে গণিত, ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াডসহ বিভিন্ন অলিম্পিয়াডকে জনপ্রিয় করতে মুহম্মদ জাফর ইকবালের অবদান অনস্বীকার্য। বিজ্ঞান জনপ্রিয় করতেও তার প্রচেষ্টার অন্ত নেই।

লেখক: অর্চি হক

শেয়ার করুন !
  • 361
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!