সময় এখন
নাহিদ রেইনস নামের এক সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার বিএনপির বিরুদ্ধে ‘ডিপ ফেইক’ বা সহজ ভাষায় বললে ‘গুজব প্রচার করছে’ বলে অভিযোগ তুলে সেই নাহিদকে নিয়ে নিজেই মিথ্যা তথ্য সংবাদ সম্মেলনে প্রচার করলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসিচব রুহুল কবির রিজভী। তার দাবি, ‘নাহিদ রেইন একজন দাগী আসামী এবং জেল খেটেছেন’। কিন্তু বাস্তবতা হলো, নাহিদ কখনো গ্রেপ্তার হননি। তার বিরুদ্ধে কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ডও নেই।
রিজভীর দাবি, নাহিদ রেইনসের নেতৃত্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বিএনপি চেয়ারপারসনসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দদের নিয়ে ডিপ ফেইক ভিডিও ও অডিও প্রচার করা হচ্ছে। এ সময় নিজের বক্তব্যের সমর্থনে গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত ফিনান্সিয়াল টাইমসের একটি প্রতিবেদনও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করেন রিজভী। তিনি বলেন, বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক ও দেশের বেশকিছু স্বনামধন্য গণমাধ্যমের লোগো ব্যবহার করেও অনেক সময় ডিপ ফেইক ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর এর সবই করছে সরকার।
কিন্তু ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনটি ব্রাউজ করে দেখা যায়, সেখানে নাহিদ রেইনসের নাম উল্লেখ নেই। উল্টো সম্প্রতি ফেসবুকে দৈনিক ২০-৩০টি ভিডিও সম্প্রচার হচ্ছে, যা মূলত সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিয়ে তৈরি। এসব ভিডিওতে সিএনএন, বিবিসি, আল-জাজিরা বা বাংলাদেশি টিভি সময়, একাত্তর, ইন্ডিপেন্ডেন্টসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের নাম ও লোগো নিউজের অংশে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত তেমনই একটি ভিডিও লিংক যার শিরোনামে লেখা হয়েছে- ‘আঃ লীগ শেষ নির্বাচন আবার হবে/ সিঙ্গাপুরে গোপন বৈঠক বিএনপি পিটার হাসের/’। এ ছাড়াও ইউটিউবে সেনাবাহিনী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে নিয়ে এমন অসংখ্য গুজব ভিত্তিক ভিডিও প্রতিদিন প্রকাশিত হচ্ছে, যার আক্রমণের কেন্দ্রে থাকে সরকার এবং সেখানে বিএনপির পক্ষ নিয়ে কথাগুলো বলা হয়। এসব পেজ ও চ্যানেল বিএনপি-জামায়াত পরিচালিত বলে সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
কিন্তু কেন হঠাৎ নাহিদকে লক্ষ্য করে ব্যক্তি আক্রমণ করছে একটি দল? সংবাদ সম্মেলন করে কেন নাহিদের নামে ‘দাগী আসামী’ বলে মিথ্যা অপবাদ দিল বিএনপি এই সংবাদ সম্মেলনে? এই প্রশ্ন করা হলে নাহিদ বলেন, রিজভী সাহেব সত্য কথাই বলেছেন। আসলেই ইউটিউব ও ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমগুলোতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও স্থানীয় গণমাধ্যমের লোগো ব্যবহার করে বা খণ্ডিত সংবাদ প্রকাশ করে গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
নাহিদ আরও বলেন, রিজভী সাহেব যে কথাটি বলতে ভুলে গেছেন তা হলো, এ ধরণের গুজব বিএনপি থেকেই করা হচ্ছে বিগত ৬-৭ বছর ধরে এবং এর বিরুদ্ধে আমার লড়াইটাও চলছে তখন থেকে। তাদের এমন অনেক গুজবের দাঁতভাঙ্গা জবাব আমি দিয়েছি আমার দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে। আর এ কারণেই তারা চাইছে আমি যেন চুপ হয়ে যাই। আমাকে চুপ করাতে তারা যে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে, সেটি দেখে চুপ থাকা সম্ভব না।
ক্ষোভ প্রকাশ করে নাহিদ বলেন, রিজভীয় সাহেবকে প্রমাণ করতে হবে, আমি কোন কোন মামলার আসামী এবং দাগী আসামী হিসেবে আমার বিরুদ্ধে কী কী মামলা হয়েছে। দলীয় মাইক পেলেই অন্যের বিরুদ্ধে এমন মানহানিকর বক্তব্য দেয়া যাবে, এটা নিশ্চয়ই দেশের আইন সমর্থন করে না।
রিজভী সাহেব যদি প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হন, তবে কেন তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে না, সেটাও জানতে চাইলেন নাহিদ রেইনস।