সময় এখন ডেস্ক:
প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের “প্রাণি সম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন” প্রকল্পে ‘অ-স্বাভাবিক দামে কেনাকাটা’ শিরোনামে গত ২৩/০৮/২০২০ তারিখে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্য মোটেই সঠিক নয় এবং প্রতিবেদকের একান্ত মনগড়া। প্রতিবেদক এ বিষয়ে তথ্যের বিভ্রা’ট সৃষ্টি করে জনমনে নে’তিবাচক ধারণা সৃষ্টির প্রয়াস নিয়েছেন।
প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পর্কে গণমাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন প্রাণি সম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আব্দুর রহিম।
গণমাধ্যমে পাঠানো বক্তব্যে পরিচালক যে সকল তথ্য দিয়েছেন-
প্রতিবেদনে অতিথির বসার জন্য একটি চেয়ারের দাম ৬ লক্ষ টাকার কথা উল্লেখ রয়েছে। প্রকৃত তথ্য হলো এ সকল আসবাবপত্র (৪০টি ভিজিটর চেয়ার, ১০টি আর্মড চেয়ার, ২ সেট সোফা) উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ট্যাক্স-ভ্যাটসহ সর্বমোট ৪.৯৮ লক্ষ টাকায় ক্রয় করা হয়েছে; এতে প্রতিটি চেয়ারের ট্যাক্স ও ভ্যাটসহ দাম পড়েছে মাত্র ৪ হাজার ৫০০ টাকা, যা বাজার মূল্যের সাথে সম্পূর্ন সামঞ্জস্যপূর্ণ।
প্রতিবেদনে দুধে পানি মাপার একটি যন্ত্রের দাম ৩.৩২ লাখ, একটি ব’র্জ্য রাখার পাত্রের দাম ২.৫ লাখ, স্কুলে দুগ্ধজাত পন্য প্রদর্শনীর পেছনে ব্যয় ১০.৫০ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ধরনের কোনো কার্যক্রম অনুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে নেই। প্রকৃত তথ্য হলো, গবেষণাগারে ব’র্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৫টি পাকা পিট নির্মাণ করা হবে, যার ব্যয় ধরা আছে ৩৭.৩৫ লাখ, পাইলট ভিত্তিতে সারা দেশে মোট ৭০০টি প্রাইমারী স্কুলে বছরে ১৬০ দিন করে শিশু প্রতি ১৬০ মি.লি. হারে ৩ বছর মেয়াদে পাস্তরাইজড দুধ খাওয়ানো হবে।
গাভীর গর্ভাবস্থা পরীক্ষার জন্য ১৫.৭০ কোটি টাকার কিট কেনার বিষয় সঠিক নয়; এ ধরনের কোন টেস্ট কিট ক্রয়ের সংস্থান প্রকল্পে নেই। আধুনিক প্রযুক্তিতে গাভীর গর্ভাবস্থা পরীক্ষার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাম যন্ত্রসহ ৬০ সেট টুল কিট (১৯টি আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতিসহ) ক্রয়ের সংস্থান রয়েছে; এ জন্য মোট ২ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
প্রতিবেদনে প্রতি কেজি গো-খাদ্যের দাম ৮০ টাকা, প্রতিটি সাইকেলের দাম ১৫ হাজার টাকা, প্রতিটি কিট বক্সের দাম ৭ হাজার টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃত তথ্য হলো, প্রকল্পে প্রান্তিক খামারীর গর্ভবতী গাভীকে (প্রদর্শনীর জন্য) খাদ্য প্রদান করা হবে; প্রতি কেজির প্রাক্কলিত মূল্য ৩৮.০০ টাকা। বাই সাইকেলপ্রতি প্রাক্কলিত ব্যয় ১৫ হাজার টাকা থাকলেও ইতোমধ্যে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে দেশের একটি স্বনামধন্য কোম্পানি হতে প্রতিটি বাইসাইকেল ১২% ট্যাক্স-ভ্যাট ও দেশের সমগ্র উপজেলায় পৌঁছানোর ব্যয়সহ মাত্র ৮ হাজার টাকায় এবং প্রতি সেট কিটবক্স ৪ হাজার ৮৭২ টাকায় (১৩ প্রকারের উপকরণসহ) ক্রয় করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে ১9টি সেন্ট্রি ফিউজ কেনা খাতে ২০.৩৮ লাখ, একটি অটোক্লেভ মেশিন ৯.৩৮ লাখ, ১৯২টি উপজেলা শহরের মাংসের দোকান সংস্কারে প্রতিটির ব্যয় ২.১৪ কোটি টাকা উল্লেখ রয়েছে। তথ্যটি সম্পূর্ন বিভ্রা’ন্তিমূলক। প্রকৃত তথ্য হলো, প্রকল্পে ৫৩৫টি সেন্ট্রি ফিউজ ক্রয়ের সংস্থান রয়েছে, যার একক মূল্য- ৮০ হাজার টাকা; উপজেলা পর্যায়ে মিনি ডায়গনস্টিক ল্যাবে ব্যবহারের জন্য প্রতিটি অটোক্লেভ মেশিন দেড় লক্ষ টাকা, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ফুড সেফটি ল্যাবের জন্য (বেশী ধারণক্ষমতা সম্পন্ন) প্রতিটি ৯.৪৮ লক্ষ টাকা মূল্যে এবং উপজেলা পর্যায়ে ১৯২টি কাঁচা মার্কেটকে আধুনিক ব্যবস্থাপনার আদলে উন্নয়নের সংস্থান রয়েছে। এগুলোর বিস্তারিত বিনির্দেশিকা প্রণয়ন এখনও হয়নি, ক্রয় প্রক্রিয়াও শুরু হয়নি।
প্রতিবেদনে কর্মকর্তদের বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ব্যয় সম্পর্কে বলা হয়েছে; প্রাসঙ্গিক তথ্য হলো, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ব্যয় কর্মকর্তার গ্রেড, প্রশিক্ষণের দেশ, প্রশিক্ষণ মেয়াদ ইত্যাদি অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। অর্থ বিভাগের জারীকৃত বিধির বাইরে কোন অর্থ খরচ করার সুযোগ নেই। বাজেটের সংস্থান থাকার মানে এই নয় যে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রশিক্ষণে যাওয়া এবং ব্যয় করা অ’নিবার্য।
উল্লেখ্য, ডিপিপিতে উল্লেখিত দরই চূড়ান্ত দর নয়। ক্রয় বিধি মোতাবেক পণ্য ও কার্য এর ক্রয় প্রক্রিয়া শুরুর পূর্বেই নতুন করে বাজার দর যাচাই করে ‘ব্যয় প্রাক্কলন’ করা হয়ে হয়ে থাকে, যা পিপিআর ২০০৮ এর পরিভাষায় ‘দাপ্তরিক দর’ বলা হয়ে থাকে। ‘দাপ্তরিক দর’ এর সাথে দরদাতার দরপত্রের দর তুলনা করেই যে কোন সরকারী ক্রয় কাজ হয়ে থাকে।
অনুমোদিত ডিপিপিতে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে (পিপিআর ২০০৮ এবং বিশ্বব্যাংকের ক্রয় সংক্রান্ত বিধি অনুসরণ করেই) ক্রয় করার সংস্থান রয়েছে। এক্ষেত্রে কোনোভাবেই দুর্নীতি হওয়ার সুযোগ নেই। অধিকন্ত, ক্রয় কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত না হলে বিশ্বব্যাংক কতৃক অর্থ ছাড় হয় না।
আমরা স্বার্থহীনভাবে বলতে চাই, বর্ণিত প্রকল্পের এ যাবৎ যা ক্রয় কাজ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সাথে করা হয়েছে। যা বাজার দরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এখানে কোনো প্রকার দুর্নীতি বা অ’নিয়ম হয়নি। গণমাধ্যমে এ ধরনের অ’সত্য সংবাদ প্রকাশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষু’ণ্ণ হয়েছে। এ বিষয়ে জোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।